আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আনেক ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে একটি নতুন টপিক নিয়ে হাজির হয়েছি। তো আজকে আমি আপনাদের সামনে বাংলাদেশ কর্মসংস্থান ব্যাংক ও এর সুযোগ সুবিধা নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি আর যারা কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে চান তারা এই আর্টিকেলটি পড়ুন। তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার উপায়
কর্মসংস্থান ব্যাংক সাধারণত ১৮ বছরের উপরের যেকোনো ব্যক্তিকেই লোন দিয়ে থাকে। বর্তমানে তারা মূলত বেকার বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারদের ঋণ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করতে, শিশুশ্রম বন্ধ করতে ও যানবাহন ক্রয়ের ক্ষেত্রে মূলত লোন দিয়ে থাকে। কর্মসংস্থান ব্যাংক যেসব ক্ষেত্রে লোন দেয় তার মধ্যে কয়েকটির সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিচে দিয়ে দিচ্ছি।
১. নিজস্ব কর্মসূচিঃ এই ঋণ সেবাটি মূলত দেশের বেকার যুবকদের জন্য বিশেষ করে যারা শিক্ষিত তাদের জন্য। এই ঋণটি মূলত যুবদের আত্মকর্মসংস্থান তৈরির জন্য দেওয়া হয়ে থাকে।
২. ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণ কর্মসূচি (SECP): এই ঋণটি দেওয়া হয় যাতে দেশের বেকার যুবরা কোনো ছোটখাটো/ ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে পারে তার জন্য।
৩. বিদেশ কর্মসংস্থান ঋণ কর্মসূচিঃ যেসব ব্যক্তিরা বিদেশে কাজের খোঁজ এ যেতে চায় তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে সহায়তা করা এই ঋণ কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য।
এছাড়াও রয়েছে সরকারের বিশষ কর্মসূচি (যেমন কৃষি, শিল্প ইত্যাদি), কনজুমারস ক্রেডিট স্কিম, গৃহ নির্মাণ ঋণ, মোটর সাইকেল ঋণ ইত্যাদি।
এখন আমি বলতে যাচ্ছি ঋণ গ্রহণের জন্য কি কি ডকুমেন্টস, কি কি যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ করতে হবে।
ঋণ পাওয়ার জন্য যেসব যোগ্যতা থাকতে হবেঃ
১. উদ্যোক্তাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
২. বেকার বা অর্ধ বেকার হতে হবে।
৩. বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। কিন্তু যারা পূর্বে ইতিমধ্যে ঋণ নিয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই বয়সসীমা প্রযোজ্য নয়।
৪. উদ্যোক্তাকে ইকুইটি বহনের ক্ষমতা থাকতে হবে।
৫. শাখার অধিক্ষেত্রের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। স্থায়ী বাসিন্দা না হলে শাখার অধিক্ষেত্রের একজন স্থায়ী বাসিন্দাকে ঋণের গ্যারান্টার হতে হবে।
৬. প্রকল্প পরিচালনার বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ/অভিজ্ঞতা থাকতে হবে
৭. ঋণ ব্যবহারের যোগ্যতাসহ ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা ও আর্থিক আচরণে সুনামের অধিকারী হতে হবে
৮. অন্য কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপী হলে ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না
৯. ঋণ নীতিমালার অন্যান্য নিয়ম অনুসরণে সক্ষম হতে হবে।
লোন নেওয়ার জন্য নিম্নোক্ত কাগজপত্র থাকতে হবেঃ
১. ঋণ আবেদনের জন্য ফরম সংগ্রহ করা।
২. আবেদনকারীর দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৩. আবেদনকারীর জাতীয়তা সনদপত্র (ভোটার আউডি কার্ড/স্মার্ট কার্ড) জমা দিতে হবে
৪. কাউকে ঋণের গ্যারন্টার হিসেবে রাখলে তার দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
৫. এক লাখ টাকার উপরের এমাউন্টের ঋণের জন্য ট্রেড লাইসেন্স এর কপি প্রয়োজন
৬. ওষুধের দোকান হলে ড্রাগ লাইসেন্সের কপি থাকতে হবে।
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি
কর্মসংস্থান ব্যাংক বিভিন্ন খাতের উপর ঋণ দিয়ে থাকে। যেমনঃ মৎস্য সম্পদ, প্রাণিসম্পদ, শিল্প-কারখানা, যানবাহন/পরিবহন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, সেবা প্রকল্প, বাণিজ্যিক খাত ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি সম্পর্কে নিচে বলছি অর্থাৎ কোন কোন কাজ/ব্যবসা ওই খাতের অন্তর্ভুক্ত।
মৎস্য সম্পদঃ পুকুরে কার্প জাতীয়, পাংগাস, চিংড়ি, তেলাপিয়া, থাই কৈ, মিশ্র মৎস্য চাষ ও রেণু পোনা উৎপাদন।
যানবাহন/পরিবহন সেবাঃ টিভিএস টু হুইলার বা থ্রি হুইলার এর মাধ্যমে পণ্য বা যাত্রী পরিবহনের জন্য মূলত এই ঋণ দেওয়া হয়। টু বা থ্রি হুইলার ক্রয়, ড্রাইভার/উদ্যোক্তাদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা, পণ্য সরবরাহ ও পরিবহন সহজীকরণ, যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসকরণ ও বেকার যুবদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তাকরণের নিমিত্তে তারা ঋণ প্রদান করে থাকে।
সেবা খাতঃ সেলুন/লন্ড্রি, বিউটি পার্লার এবং হারবাল ট্রিটমেন্ট, পাওয়ার টিলার, কম্পিউটার সেবা, ফটোকপি সেবা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, মোবাইল ফোন মেরামত, গ্রামীণ যানবাহন, সেলাই মেশিন, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং/গাড়ি মেরামত ওয়ার্কশপ, ডায়াগনস্টিক সেন্টার/ক্লিনিক/দন্ত চিকিৎসা, স্টুডিও, শিক্ষা সেবা, ক্যাবল অপারেটরস, জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ, কমিউনিটি সেন্টার, বিনোদন পার্ক, আবাসিক হোটেল, পর্যটন কটেজ, সোলার পাওয়ার, সাইবার ক্যাফে ইত্যাদি সেবা খাতের জন্য ঋণ লাওয়ার যোগ্য।
শিল্প কারখানাঃ মৎস্য হ্যাচারী, পোল্ট্রি হ্যাচারী, কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা, প্রাণি খাদ্য তৈরির কারখানা, চিড়া/মুড়ি কল/ শিল্প, ধানের চাতাল/রাইস মিল, বেকারী শিল্প, অয়েল মিল, স’মিল, ফলজাত খাদ্য শিল্প, সুষম সার প্রস্ত্ততকরণ, আটা/ময়দা/সুজি প্রস্ত্ততকরণ, ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়্যার, স্টার্চ, গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ উৎপাদনকারী শিল্প,আইসক্রিম ফ্যাক্টরী, গুঁড়া মসলা উৎপাদনকারী শিল্প, সুগন্ধি চাল উৎপাদন, ডাল প্রক্রিয়াজাতকরণ, নারিকেল তেল উৎপাদন, বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ, রাবার প্রক্রিয়া- জাতকরণ, চামড়া শিল্প ইত্যাদি।
এখন সুদের হার সম্পর্কে কথা বলা যাক।
নিজস্ব কর্মসূচির মধ্যে উৎপাদনশীলতা ও সেবামূলক খাতে সুদের হার ১১%। ঋণটি অনিয়মিত বা খেলাপি হলে ১% ও মেয়াদোত্তীর্ণ হলে আরও ১% যোগ করে সুদ দিতে হবে। আর বাণিজ্যিক খাতে সুদের হার ১৩%। ঋণটি অনিয়মিত না খেলাপি হলে ১% ও মেয়াদোত্তীর্ণ হলে আরও ১% যোগ করে সুদ দিতে হবে।
ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণ কর্মসূচিতে সুদের হার ১৩%।
কৃষিভিত্তিক শিল্পস্থাপনে ঋণ সহায়তা কর্মসূচিতে সুদের হার ৮-৯%।
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন আবেদন ফরম
আপনি লোন আবেদন ফরম দুইভাবে পেতে পারেন।
প্রথম, আপনি চাইলে আপনার নিকটস্থ ব্রাঞ্চ থেকে ফরম সংগ্রহ করে। তারপর তা পূরণ করে ব্যাংকে জমা দিয়ে দিতে পারেন। নাহলে আপনি অনলাইন থেকে ফরমটি ডাউনলোড করে তারপর তা প্রিন্ট আউট করে তারপর তা পূরণ করে ব্যাংকে জমা দিতে পারেন। আপনি ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করে পূরণ করতে সাজেস্ট করব।
এখন জানা যাক লোন আবেদন ফরমে কি কি পূরণ করতে হবে। আপনাকে Project Area, Applicant Full Name, National ID Number (Own), Mobile Number, Father/Spouse Name, Mother’s Name, Address, Guarantor Name, National ID Number (Guarantor), Date Of Birth ও Project Type & Name এই অপশনগুলো পূরণ করতে হবে। Project Area এর জায়গায় আপনার প্রোজেক্ট/সেবা কিসের উপর ভিত্তি করে তা লিখবেন। Applicant Full Name এ আপনার সম্পূর্ণ নামটি দিতে হিবে। তারপর আপনার আইডি কার্ড নাম্বারটি দতে হবেম তারপর বাব ও মায়ের নাম্বার দিন। এরপর আপনার বর্তমান ঠিকানা দিন। এবং গ্যারান্টারের নাম ও আইডি কার্ড নাম্বার দিন। এরপর আপনার জন্মতারিখ এ ব্যবসার ধরণ ও নাম লেখুন।
কর্মসংস্থান ব্যাংক শাখা সমূহ
সারাদেশে কর্মসংস্থান ব্যাংকের সদর দপ্তর ১, রাজউক এভিনিউ, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ। এদের মোট ৩৩টি আঞ্চলিক কার্যালয় ও মোট ২৫১টি শাখা রয়েছে। সকল শাখার নাম ও স্থানের নাম এখানে মেনশন করা সম্ভব নয়। তাই আমি নিচে লিংক দিয়ে দিচ্ছি। সেই লিংকে ক্লিক করলে আপনি কর্মসংস্থান ব্যাংকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে চলে যাবেম সেখান থেকে পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করে লোকেশনগুলো দেখে নিন।
লিংক- http://kb.gov.bd/site/download/ac24eab9-bd50-4bf4-9dbc-84a209fe92a1/-
কর্মসংস্থান ব্যাংক ফোন নাম্বার
আপনি চাইলে তাদের যেকোনো শাখায় গিয়ে সাহায্য নিতে পারেন। কিন্তু ফোনের মাধ্যমে নিতে চাইলে তাদের ফোন নাম্বার- 02-47111141
তাছাড়া ইমেইম এড্রেস- info@kb.gov.bd
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পরিশোধ পদ্ধতি
আপনি কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে জামানত ব্যতিত লোন পেতে পারেন। এখানে আপনি অন্যান্য ব্যাংকের মতো করেই লোন পরিশোধ করবেন। আপনার প্রতি মাসে কত টাকা ইন্টারেস্ট দিতে হবে তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনাকে জানিয়ে দিবেন। আর প্রতিমাসে নির্দিষ্ট সময়ে আপনাকে মেসেজের মাধ্যমে টাকাটি দিয়ে দেওয়ার জন্য বলা হবে। এরপর আপনি আপনার নিকটস্থ ব্যাংক শাখায় গিয়ে লোন ও ইন্টারেস্ট পরিশোধ করে আসুন।
কর্মসংস্থান ব্যাংক অনলাইন আবেদন
আপনি এই ব্যাংক থেকে চাইলে অনলাইনেও ঋণ অনুরোধ করতে পারবেন। তার জন্য প্রথমে নিচের দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন। ক্লিক করলে আপনি তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের ফরম পূরণের পেইজে চলে যাবেন। আমি ইতিমধ্যে বলে দিয়েছি কিভাবে ফরমটি পূরণ করতে হবে। দয়া করে স্ক্রল করে উপরে গিয়ে দেখে নিন কোথায় কি লিখতে হবে। ফরমটি পূরণ করার পর Submit লেখা অপশনে ক্লিক করুন। তারপর আপনার দেওয়া ফোন নাম্বারে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি ফোন আসবে কনফার্ম করার জন্য ও আপনাকে সব বিস্তারিত জানানোর জন্য।
লিংক- http://kbolas.karmasangsthanbank.gov.bd/Loan-Application-Form
কর্মসংস্থান ব্যাংক বেকার লোন
মূলত এই ব্যাংকটি তৈরিই হয়েছিল বেকার ও অর্ধ বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। তাই এ ব্যাংকের অরায় সকল স্কিম ও লোন কর্মসূচিই মূলত বেকারদের জন্য।
কর্মসংস্থান ব্যাংক কি সরকারি
হ্যাঁ, এটি একটি সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক। কর্মসংস্থান ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত অ-তফসিলী ব্যাংক। ১৯৮৮ সালে বেকারদের অর্থ সহায়তা দিয়ে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ ব্যাংকের যাত্রা শুরু।
এ ব্যাংকটি ইতিমধ্যেই অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকের জীবন পাল্টে দিয়েছে। এটি হাজারো ক্ষুদ্র শিল্প-ব্যবসা তৈরিতে সহায়তা করেছে।
যেকোনো ব্যক্তিই এই ব্যাংক থেকে সহজেই কোনো জামানত ছাড়াই ঋণ নিতে পারেন।
তো আজকের জন্য এতটুকুই। পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সেই কামনায় আজকের জন্য বিদায় জানাচ্ছি। আমাদের সঙ্গেই থাকুন।